শ্রীলঙ্কা কেন হলো সর্বহারা ?

👹👺💀

শ্রীলঙ্কা কেন হলো সর্বহারা
?

ধ্বংসের অত্যন্ত কাছাকাছি পৌঁছে গেছে শ্রীলঙ্কা।। 


এখন প্রশ্ন উঠবে,, এই ধ্বংসের কারণ কি ?? কেনো এমন হলো ?? 


এককথায় বলতে গেলে,, "শের" পালনের খেসারত দিয়েছে,, সেই দেশের সাধারণ জনগণ।। 


একটা মাত্র "শের",, ফাঁকা জঙ্গলে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে বিচরণ করার সুযোগ পেয়েছে।। "শের" যা ইচ্ছে তাই করে গেছে,, নিজের মনমর্জি মতো দেশ পরিচালনা করে গেছে।। কোনো বিরোধিতা ছিলো না,, বিরোধী শূন্য ময়দানে শের স্বৈরতন্ত্র এবং একনায়কতন্ত্র কায়েম করে গেছে।। 


ফলাফল যেটা হবার,, সেটাই হতে চলেছে।। 


শ্রীলঙ্কা সুখ এবং সমৃদ্ধির মেলবন্ধনে পরিপূর্ণ একটি দেশ ছিলো।। সমুদ্রের বুক চিরে উঠে আসা পাহাড়ি দেশ শ্রীলঙ্কা।। এখানে শষ্য-দানার চাষবাস উল্লেখযোগ্য ছিলো না।। কিন্তু,, চা,, মশলা,, রাবার,, এবং সমস্ত ধরনের হার্টিকালচার ফসলের উপর ভিত্তি করে দেশটার ইকোনমিক সিষ্টেম মজবুত হয়ে উঠেছিল।। 


শিক্ষা ব্যবস্থা,, স্বাস্থ্য পরিষেবা,, মাথাপিছু আয়,, এবং,, GDP এর নিরিখে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতো শ্রীলঙ্কা।। মোটামুটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ ছিলো শ্রীলঙ্কা।। 


দেশটা বর্তমানে দেউলিয়া !!


প্রভাকরণ-কে হত্যা করে,, রাজাপক্ষে গোটা দেশের জনগণের হৃদয় সম্রাট হয়ে ওঠেন।। দেশের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে একাধিকবার সরকার গঠন করেন রাজাপক্ষে।। দেশে রাজাপক্ষের বিরোধী বলে কিছু ছিলো না।। 


বিরোধী শূন্য মজবুত সরকার মানেই,, সবকিছু ওপেন।। খোলা বাজার,, ব্যাবসা,, ব্যাঙ্ক,, অর্থব্যাবস্থা,, আইন-আদালত,, কোর্ট-কাছারি,, সবকিছু রাজাপক্ষের হাতের মুঠোয়।।


কোনো এক সময়ে জনতার নয়নের মনি রাজাপক্ষে এখন শ্রীলঙ্কার সাধারণ জনগণের চোখে ভিলেন বনে গেছেন।। তার এবং তার পরিবারের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে,, গোটা দেশের মানুষ।। 


ডিক্টেটর সবজান্তা।। সবকিছুর উর্দ্ধে তার অবস্থান।। 


সায়েন্স,, টেকনলজি,, হিষ্ট্রি,, সিভিক্স,, ব্যাঙ্কিং,, বিজনেস,, এগ্রিকালচার,, স্পোর্টস,, স্পেস,, রেডার,, সর্ববিষয়ে পারদর্শী মহান রাজাপক্ষে।। অসীম জ্ঞানের ভান্ডার তিনি।। কোনোকিছু তাঁর কাছে টেকে না।। এক কথায় অল-ইন-ওয়ান ছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট।। 


রাষ্ট্রপতি রাজাপক্ষে সিদ্ধান্ত নিলেন-- দেশকে বিশ্বগুরু বানিয়ে তবেই ক্ষ্যান্ত হবেন।। যেমন ভাবনা তেমন কাজ।। শ্রীলঙ্কাক "অর্গানিক বিশ্বগুরু" করে তুলতে বদ্ধপরিকর মহান রাজাপক্ষে।। 


এখানেই মুখ থুবড়ে পড়লো একটা সমৃদ্ধ দেশ।। একজন স্বৈরাচারী শাষকের অদূরদর্শী মনোভাবের কারনে ধ্বংস হয়ে গেলো,, সুফলা- সুজলা একটা দেশ।। 


দেশকে 100% অর্গানিক করে তোলার জন্য বদ্ধপরিকর রাজাপক্ষে।। ধীরে চলার নীতিতে বিশ্বের কোনো স্বৈরাচারী বিশ্বাস রাখতে পারেন না।। তীব্র গতিতে ছুটতে গিয়ে পতন ঘটে গেলো।। 



রাষ্ট্রপতি সরাসরি ঘোষণা করে দিলেন,, গোটা দেশের এগ্রিকালচার সেক্টরে ফার্টিলাইজার এবং কীটনাশক নিষিদ্ধ।। শ্রীলঙ্কার মাটিতে কৃষিকাজে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যাবহার করা যাবে না।। আইন অমান্য করলে,, কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।। রাতারাতি গোটা শ্রীলঙ্কা অর্গানিক হয়ে গেলো।। 


গোটা বিশ্ব দরবারে বেজে উঠলো রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের নামের ডঙ্কা।। UNA পিঠ চাপড়ে উৎসাহিত করলো।। কিন্তু,, শঙ্কায় ছিলেন সে দেশের বিজ্ঞানীরা,, তাঁরা পরিস্কার জানিয়ে দিলেন - এই পদক্ষেপের কারনে শ্রীলঙ্কার কৃষি ব্যাবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে।।" 


কিন্তু,, কে শোনে কার কথা !! রাষ্ট্রপতি তখন অল-ইন-অল,, কারো কথায় কর্ণপাত করার প্রয়োজন বোধ করলেন না।। 


শ্রীলঙ্কার এগ্রিকালচার সিষ্টেম বরবাদ হয়ে গেলো।। এক ঝটকায় উৎপাদিত ফসল অর্ধেকে নেমে এলো।। 


মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে আবির্ভাব হলো করোনা ভাইরাস।। গোটা দেশের ট্যুরিজম ব্যাবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে।। বিদেশী মুদ্রা আগমনের পথ এগ্রিকালচার এবং ট্যুরিজম,, উভয় দিক হতে বন্ধ হয়ে গেলো।। 


বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে,, খাদ্যশস্য আমদানি বন্ধ হয়ে গেলো।। কারণ,, খাদ্যশস্য চাষাবাদ শ্রীলঙ্কার মাটিতে কোনোকালেই উল্লেখযোগ্য ছিলো না।। 


খাদ্যশস্যের প্রচন্ড অভাব।। দেশের মানুষ রয়েছে অনাহারে।। এমতবস্থায় প্রেসিডেন্ট হুকুম দিলেন সেনাপ্রধান- কে।। সেনাপ্রধান ঘুরে ঘুরে শষ্য ব্যাবসায়ীদের গুদামে হানা দিলেন।। জোর করে কেড়ে নেওয়া হলো,, গুদামজাত খাদ্যশস্য।। ব্যাবসায়ীরা বাধ্য হয়ে আমদানি বন্ধ করে দিলেন।। 


গোটা দেশে দেখা দিলো চূড়ান্ত খাদ্য সংকট।। 


রাষ্ট্রপতি এখন বিপাকে।। কৃষি মন্ত্রণালয় সঠিক তথ্য গোপন করতে শুরু করে দিলো।। বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো,, এগ্রিকালচার সেক্টরে ফার্টিলাইজার এবং কীটনাশক ব্যাবহার করতে হবে।। কিন্তু,, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারনে,, ফার্টিলাইজার- কীটনাশক ফ্যাক্টরি ডগে উঠে গেছে।। এখন একমাত্র ভরসা আমদানি করা।। কিন্তু,, সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।। কারণ,, সরকারের হাতে টাকা নেই।। 


বর্তমানে শ্রীলঙ্কার ইকোনমি ধ্বংস হতে চলেছে।। বিশ্বের কোনো দেশ শ্রীলঙ্কার মুদ্রা স্পর্শ করতে চাইছে না।। আমদানি করার মতো অর্থ সরকারের হাতে নেই।। গোটা দেশের রেশন ব্যাবস্থা ধুঁকে চলেছে।। সরকার সাধারণ মানুষের জন্য রেশন বরাদ্দ করতে পারছে না।। 


শ্রীলঙ্কার মূল্যবৃদ্ধি দশ গুনের চেয়েও বেশী ছাপিয়ে গেছে।। যার বাড়িতে দু-চার দিনের খাদ্য মজুদ রয়েছে,, তিনিই এখন সে দেশের সবচেয়ে ভাগ্যবান ব্যক্তি।। গোটা দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশী মানুষ অনাহারের কবলে পড়তে চলেছে।। পরিস্থিতি এতো খারাপ পর্যায়ে চলে গেছে যে,, এক কেজি চাল অথবা গমের বিনিময়ে সে দেশের যুবতী,, বেশ্যাবৃত্তি করতে বাধ্য হয়ে পড়েছেন।। 


ফিলহাল কোনো দেশ অথবা বিশ্বব্যাঙ্ক শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিতে চাইছে না।। সরকার বাধ্য হয়ে একের পর এক রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিক্রি করে চলেছে।। 


এমন ভাবেই চীনের কাছে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে,, দেশের বৃহত্তম "হাম্বানটোটা" বন্দর চীনের হাতে তুলে দিতে হয়েছে,, 99 বছরের লীজ হিসাবে।। 


রাজাপক্ষের শ্লোগান ছিলো - "ম্যায় দেশ বিকনে নেহী দুঙ্গা।।" কিন্তু,, আদতে সেটা সম্ভব নয়।। ঋণের দায়ে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা হয়তো নিজেদের অস্তিত্ব বিসর্জন দিতে চলেছে।। 


কোনো এক সময়,, দেশের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা প্রাইভেটাইজেশন হতে দেখেও শ্রীলঙ্কার জনগণের টনক নড়ে ওঠেনি,, অথচ,, আজ তারা হাড়ে হাড়ে টের পেতে শুরু করেছে।। 


কোনো এক সময় শ্রীলঙ্কার জনগণের নয়ণের মনি,, সৎ,, কর্মঠ,, সর্বজ্ঞানী রাষ্ট্রপতি এখন তাদের চোখের বালি হয়ে উঠেছেন।। 


অনেক সাধ করে শ্রীলঙ্কার মানুষ "শের" পালনের কথা ভেবেছিলেন।। তাদের পালিত শের বুমেরাং হয়ে,, তাদেরকেই দংশন করে চলেছে।। শ্রীলঙ্কার মানুষের বিশ্বগুরু হয়ে ওঠার স্বপ্ন,, দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে।। 

#সংগৃহীত

Comments

Popular posts from this blog

STORY OF KFC 🍗

Former BSF jawan shot dead his daughter in the court premises .